বাংলাদেশের টেস্টে সেরা একাদশে আছে এরা

 


উইজডেন ইন্ডিয়ার পথেই হাঁটা যাক!

খুব সহজ এক সূত্র ব্যবহার করেই উইজডেন ইন্ডিয়া ভারতের সর্বকালের সেরা টেস্ট একাদশ নির্বাচন করেছে। আর সেটি এমনভাবেই করা হয়েছে, কোনো বিতর্ক ওঠার জো নেই। যদি কারও দায় থাকে, তবে তা আইসিসির। আইসিসির টেস্ট র‌্যাঙ্কিংকে ভিত্তি করেই নির্বাচন করা হয়েছে একাদশ। ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্টের হিসেবেই বেছে নেওয়া হয়েছে খেলোয়াড়দের।

একই সূত্র ব্যবহার করে বাংলাদেশের সেরা টেস্ট একাদশ বানিয়ে ফেলাটা খুব কঠিন কোনো কাজ নয়। যা একটু সমস্যা, একাদশের বিন্যাস নিয়ে। একজন উইকেটকিপার, একজন অলরাউন্ডারের সঙ্গে কয়জন ব্যাটসম্যান ও বোলার থাকবেন, প্রশ্ন সেটিই। বোলিং আক্রমণে স্পিনার–পেসারদের অনুপাত ঠিক করাটাও একটু ঝামেলার বটে।

উইকেটকিপার ও অলরাউন্ডার হিসেবে কারা থাকবেন দলে, সেটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনো কারণই নেই। হ্যাঁ, যে দুজনের কথা ভাবছেন তাঁরাই—মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। উইকেটকিপারদের আলাদা র‌্যাঙ্কিং নেই বলে ব্যাটিংয়ের রেটিং পয়েন্টের সঙ্গে উইকেটকিপিংয়ের পরিসংখ্যানই ভরসা। এই দুই হিসাবে মুশফিকের বিকল্প কোথায়! তিনি তো শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবেই চলে আসেন দলে। আর সব কাজের কাজি সাকিব রেটিং পয়েন্টের হিসাবে বোলিং ও অলরাউন্ডার বিভাগে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা। ব্যাটিংয়ে শুধু তামিম ইকবালই আছেন তাঁর ওপরে।

বিজ্ঞাপন
হাবিবুল বাশার আছেন সেরা একাদশে।
হাবিবুল বাশার আছেন সেরা একাদশে।
ফাইল ছবি

সাকিব–মুশফিকের সৌজন্যে সাত ব্যাটসম্যান ও চার বোলার নিয়েই একাদশ সাজানো যায়। সাকিব তো বোলিংটাও করবেন। তবে প্রশ্ন হলো, ওপেনিং জুটিতে রেটিং পয়েন্টের হিসাবে বাংলাদেশের সেরা তামিম ইকবালের সঙ্গী হবেন কে? টেস্টে তামিম ছাড়া আর যে ২০ ব্যাটসম্যান কোনো না কোনো সময় বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করেছেন, তাঁদের কেউই সেরা সাতে নেই। উইজডেন ইন্ডিয়া যেমন সুনীল গাভাস্কারের সঙ্গী হিসেবে নিয়মিত কোনো ওপেনারকে খুঁজে পায়নি, বাংলাদেশেরও একই দশা। তাই বাধ্য হয়েই মুমিনুলকে নিতে হচ্ছে তামিমের সঙ্গী হিসেবে। তাতে মিডল অর্ডারের ক্রম সাজানোটাও সহজ হয়।

বোলিংয়ে যেহেতু সাকিব আছেন, তাই আরও দুই স্পিনারের সঙ্গে দুইজন পেসার রাখা যায়। এই দলটা তো আর শুধু দেশের মাটিতে স্পিনবান্ধব উইকেটেই খেলবে না! এই একাদশ কোনো বিতর্ক তৈরি করতে পারে এই স্পিনার–পেসার সমন্বয়ের কারণেই। বোলিংয়ে বৈচিত্র্য রাখতে না হলে যে শুধু স্পিনার দিয়েই সাজাতে হতো দল। রেটিং পয়েন্টে বাংলাদেশের সেরা পেসার সেই মাশরাফি বিন মুর্তজা আছেন পাঁচে, সেটিও অফ স্পিনার সোহাগ গাজীর সঙ্গে যৌথভাবে। দুই পেসারের বাধ্যবাধকতায় রাখা যায়নি মোহাম্মদ রফিককে।

রেটিং পয়েন্টের হিসাবে বাংলাদেশের সেরা টেস্ট একাদশ

তামিম ইকবাল

ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৭০৯
ব্যাটিংয়ে ৭০০ পয়েন্ট পাওয়া একমাত্র বাংলাদেশি খেলোয়াড় তামিম ইকবাল। ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সময় সর্বোচ্চ ৭০৯ পয়েন্ট পেয়ে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ অবস্থান ১৪ নম্বরে উঠেছিলেন তামিম। যেকোনো বিচারেই অবশ্য বাংলাদেশের প্রায় ২১ বছরের টেস্ট ইতিহাসে ব্যাটিং অর্ডারের সবার আগে থাকবে টেস্টে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের মালিকের নাম।

ওপেনিংয়ে তামিমে সঙ্গী মুমিনুল।
ওপেনিংয়ে তামিমে সঙ্গী মুমিনুল।
ফাইল ছবি

মুমিনুল হক

ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৬৬১
টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক ২০১৫ সালে পাকিস্তান সিরিজের সময় পেয়েছিলেন ক্যারিয়ার সর্বোচ্চ ৬৬১ পয়েন্ট। বাংলাদেশের বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দলে জায়গা হারালেও টেস্ট একাদশে অপরিহার্য নাম।

হাবিবুল বাশার

ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৬৫৬
বাংলাদেশের আদি টেস্ট দলের সদস্যদের মধ্যে শুধু হাবিবুল বাশারই আছেন এখানে। ২০০৩ সালের পাকিস্তান সফরের সময় তুঙ্গে উঠেছিল সাবেক অধিনায়কের রেটিং পয়েন্ট। লম্বা একটা সময় বাংলাদেশের ব্যাটিং প্রায় একাই টেনেছেন ৫০টি টেস্ট খেলা হাবিবুল।

বিজ্ঞাপন

মুশফিকুর রহিম

ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৬৫৮
তামিমের মতো মুশফিকুর রহিমও ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট পেয়েছেন ২০১৭ সালের অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সময়। টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের লড়াইয়ে তামিমের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মুশফিকের ব্যাটিং নিয়ে খুব বেশি বলার দরকার আছে কি?

নাসির, সাকিব, মুশফিক—তিনজনই আছেন সেরা একাদশে।
নাসির, সাকিব, মুশফিক—তিনজনই আছেন সেরা একাদশে।
ফাইল ছবি

সাকিব আল হাসান

ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৬৯৪
বোলিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৭০৫
অলরাউন্ডার সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৪৮৯
একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিন সংস্করণের ক্রিকেটেই এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান তামিম–মুশফিকের মতো ২০১৭ অস্ট্রেলিয়া সিরিজের সময়েই উঠেছিলেন রেটিং পয়েন্টের চূড়ায়। সেটি শুধু ব্যাটিংয়ে নয়, বোলিং ও অলরাউন্ডার বিভাগেও।

মাহমুদউল্লাহ

ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৫৭৪
টেস্ট দলে জায়গা হারানো মাহমুদউল্লাহ ২০১৯ সালের নিউজিল্যান্ড সফরের প্রথম টেস্ট শেষে পেয়েছিলেন সর্বোচ্চ পয়েন্ট। টানা দুই টেস্টে সেঞ্চুরির পুরস্কার পেয়েছিলেন অলরাউন্ডার হিসেবে দলে আসা মাহমুদউল্লাহ। ৪৯ টেস্টের ক্যারিয়ারে ২ হাজার ৭৬৪ রানের পাশে ৪৩টি উইকেটও আছে তাঁর।

নাসির হোসেন

ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৫৫০
২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের সময় সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট পেয়েছিলেন নাসির। ওই বছরের শুরুর ভাগে শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট ক্যারিয়ারের একমাত্র সেঞ্চুরিটি পেয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের হারিয়ে যাওয়া নাম নাসির।

মিরাজ ও তাইজুল, দুজনই আছেন একাদশে।
মিরাজ ও তাইজুল, দুজনই আছেন একাদশে।
ফাইল ছবি

মেহেদী হাসান মিরাজ

বোলিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৬৯৬
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে ১৯ উইকেট নেওয়া অফ স্পিনার ২০১৮ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে ওঠেন নিজের সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্টে। ২৬ টেস্টে ১০৪ উইকেট নেওয়া মিরাজ এখন নিজের অলরাউন্ডার সত্তাটাও ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছেন।

মাশরাফি বিন মুর্তজা

বোলিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৪৫৯
২০০৯ সালে ক্যারিয়ারের সর্বশেষ টেস্ট খেলা মাশরাফি বিন মুর্তজা ২০০৭ সালে ভারতের বাংলাদেশ সফরের সময় পেয়েছিলেন সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট। চোট বাদ সাধায় মাত্র ৩৬ ম্যাচ আর ৭৮ উইকেটেই শেষ তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ার। রেটিং পয়েন্টের হিসাবে মাত্র একজন পেসার নিয়ে বাংলাদেশের একাদশ সাজালেও দলে থাকবেন বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা অধিনায়ক।

সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্টের হিসেবে টেস্টে বাংলাদেশের সেরা পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা।
সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্টের হিসেবে টেস্টে বাংলাদেশের সেরা পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজা।
ফাইল ছবি

তাইজুল ইসলাম

বোলিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৬৬৬
ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করা তাইজুলের দখলেই টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংস সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড (৮/৩৯)। এই বাঁহাতি স্পিনার মিরাজের মতোই ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাংলাদেশ সফরে পান সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট।

শাহাদাত হোসেন

বোলিংয়ে সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট: ৪৩৮
দ্বিতীয় পেসার হিসেবে একাদশে জায়গা পাওয়া শাহাদাত হোসেন ২০১০ সালে দেশের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে সিরিজের সময় পেয়েছিলেন সর্বোচ্চ রেটিং পয়েন্ট। ৩৮ টেস্ট ৭২ উইকেট নেওয়া বোলার ২০০৮ সালে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২৭ রানে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। টেস্টে বাংলাদেশের পেসারদের সেরা বোলিং এটিই।

Share on Google Plus

About NewsBooks24

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment